চা খেতে বের হয়েছিলাম। প্রথম চুমুক টা দিতেই অপর পাশের মুদি দোকানে চোখ গেলো। একজন লোক শার্ট প্যান্ট ইন করে তেলের বোতল গোছাচ্ছে। মোটামুটি ১৫/২০ ফিট দূর থেকে বুঝতে পারলাম উনি নির্দিষ্ট কোন এক ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেলের বোতল গুলো পিছন থেকে সামনে এনে রাখছে। আমি তখনো চা খেয়েই যাচ্ছি। লোকটা তেল গুছিয়ে বের হলো আর তার কাঁধে ঝোলানো ব্যাগে লেখা দেখলাম বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেড। বুঝে গেলাম ওই ব্র্যান্ড টা তবে রুপচাঁদা সয়াবিন তেল ছিল। নিজের কাছে মনে হচ্ছিল, এই বুঝি একটা পাজল সলভ করে ফেলেছি।
আরো এক চুমুক চা মুখে দিতেই খেয়াল করলাম ওখানে আশে পাশে আরো ২ টা ব্র্যান্ড এর সয়াবিন তেল রয়েছে। মাঝের টা পুষ্টি আর আরেকটা কি সেটা এখনো বুঝার চেষ্টা করতেছি, কিন্তু বুঝতে পারতাছিনা।
কনফার্ম হবার জন্য চায়ের বিল দিয়ে রাস্তার মাঝখানে গেলাম, এবং খেয়াল করলাম পুষ্টি একদম গদ গদ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, ডানের টা রুপচাঁদা, কিন্তু আরেকটা কি এখনো বোঝা যাচ্ছে না। একদম সামনে যেতে দেখতে পেলাম এটা ফ্রেশ-এর সয়াবিন তেল। হয়তো ব্র্যান্ড ম্যানেজার দের কাছে এটা কোন ইস্যু ই না। এতো দূর থেকে তো কেও আর তেল খুজে বেড়ায় না, কিন্তু সেই সুযোগে তীরের সামনে দাঁড়িয়ে তীর মেরে দিল পুষ্টি।
আবার মনে পড়ে গেলো, Visibility is more important than availability.
হাতে কলমে ডিজিটাল মার্কেটিং প্র্যাক্টিস করতে চান?

ভিজিবিলিটি এর কথা বলতে গেলে এখানে চলে আসে রঙ এর গল্প। এ যাবত যত ব্র্যান্ড এর লোগো দেখেছেন হোক সেটা লাল, নীল, হলুদ, বেগুনি সবই কিন্তু কথা বলে, কিছু কিছু আবার হাসেও। আর রঙ এর এই কথা বলার প্রক্রিয়াটাকে মার্কেটিং এর ভাষায় বলে কালার সাইকোলজি। এর মানে হলো আমরা যখনি কোন কালার দেখি সেটা আমাদের ব্রেইনে ট্রিগার করে। কারণ প্রতিটা কালারের ই কোননা কোন লুকানো অর্থ রয়েছে।
দুইটা কালারকে কথা উদাহরণ হিসেবে নিলে-
লাল মানেই বিপদ আর সবুজ মানেই গ্রোথ। আর তাই তো শেয়ার মার্কেটে দাম বাড়লে সবুজ সাইন দেখায় আর কমলে লাল। তেমনিভাবে আমাদের ট্রাফিক লাইট ও এক সুরেই কথা বলে।
শুনে অবাক হবেন একই কালারের আবার দুই রকম অর্থ ও রয়েছে। একটা পজিটিভ আবার আরেকটা নেগেটিভ। এই যে লাল মানে বিপদ বললাম, এই লাল মানে কিন্তু আবার এক্সাইটমেন্ট ও বুঝায়। কিছু এক্সাইটেড ব্র্যান্ড দেখি চলুন, কোকাকোলা, ভার্জিন কোলা, ইউটিউব, টয়োটা.
অনেকেই আবার টয়োটা’র লোগো যে লাল এটা শুনেই অবাক হয়েছেন। আসলেই টয়োটা’র অফিশিয়াল লোগো টা কিন্তু লাল ই, আমরা অনেকেই হয়তো তা জানি না।
আবার ক্রিয়েটিভিটি বুঝাতে ব্যাবহার করা হয় বেগুনি। এটা দেখা যায় ইয়াহু, টি-মোবাইল, বাসকিন এন্ড রবিন এর মতন বড় বড় সব ব্র্যান্ড এর লোগোর কালারে।
আপনি কি ট্রাস্ট খুজছেন? তবে আপনি ঠিক প্রোডাক্ট ই হাতে পেয়ছেন। বলছিলাম আমাদের সকলের প্রিয় লেপটপ ব্র্যান্ড এইচ.পি এবং ডেল এর কথা। এ লিস্টে আরো রয়েছে ওয়ার্ডপ্রেস, আই.বি.এম, ওরাল-বি সহ আরো অনেক নামীদামি ব্র্যান্ড। কালার টা কি বলুন তো, কালার টা হলো নীল।
কিছু ফ্রেন্ডলি প্রোডাক্ট ও রয়েছে, যেমন ফান্টা, ব্লগার ডট কম, মজিলা ফায়ারফক্স। ফান্টা শুনেই তো বুঝে গেছেন বলছি অরেঞ্জ কালার এর গল্প।
কালো সম্পর্কে আপনার মতামত কি? ব্ল্যাক ম্যাজিক টাইপ কিছু? সত্য বলতে কি একদম উল্টো। কালো রং দিয়ে ব্যালেন্স বা শান্ত বুঝায়। এ লাইনে রয়েছে পুমা, নাইক, উবার, ডিসনে ইত্যাদি। ব্ল্যাক কে কিন্তু আবার দ্যা মোস্ট হ্যান্ডসাম কালার ও ধরা হয়। আমাদের দেশীয় একটা বিজ্ঞাপনের উদাহরণ টানলাম। হোন্ডা একবার একটা ক্রিয়েটিব স্টাটিক কন্টেন্ট ক্রিয়েট করেছিলো এই নামে যে, Black is Mysterious Color.
এই যে রঙ নিয়ে গল্প বললাম আপনার কি জানা আছে পৃথিবীতে মোট কত ধরনের রঙ রয়েছে? পৃথিবীতে মূলত ৫ টি মৌলিক রং রয়েছে। সেগুলা হলোঃ লাল, নীল, হ্লুদ, সবুজ, এবং কমলা। এছাড়া ও তিনটা নিউট্রাল রঙ রয়েছেঃ কালো, ধূসর এবং সাদা। ব্র্যান্ডের ক্ষেত্রে রঙ ব্যাবহারের ক্ষেত্রে মৌলিক রঙ গুলোই বেছে নেয়া ভালো।
উপরে যে কয়টা মৌলিক রঙ এর কথা বললাম তার মধ্যে লাল রংটাই দেখবেন বেশির ভাগ ব্র্যান্ড ব্যাবহার করে থাকে। এর কারণ হচ্ছে লাল রঙ চোখের রেটিনাকে অনেক বেশি উদ্দীপিত করতে পারে। তাই অডিয়েন্সের মনযোগ আকর্ষণের জন্য আমাদের দেশীয় ব্র্যান্ড গুলোর মধ্যে কালার নিয়ে সব থেকে বেস্ট খেলা দেখিয়েছে সম্ভবত মোবাইল ফাইনান্সিয়াল কোম্পানী বিকাশ। স্মুথ একটা একটা পিংক কালারের ব্যবহার তাদের দিকে বারেবার চোখ নিয়ে যেতে বাধ্য করেছে।
When you look at a strong Brand, you see a color.