ধোঁয়া ও বিক্রি হয় যদি মার্কেটিং ঠিক থাকে..

এক লোক হাতে একটা মেশিন নিয়ে কোনো এক দোকানে এক গাদা ধোঁয়া ছড়িয়ে দিয়ে চলে গেল, কিন্তু দোকানী তাকে কিছুই বললেন না। কেন জানেন?

কারণ এ ধোঁয়া দোকানীর জন্য নিড। এ ধোঁয়া তাকে বেনেফিট দেয়। এ ধোঁয়া তার সমস্যার সমাধান করে। এ ধোঁয়ার ডিম্যান্ড (demand) আছে মার্কেটে, কিন্তু যত্র-তত্র সাপ্লাই (supply) নাই। কারণ এযে মশা মারার ধোঁয়া!

মার্কেটিং (marketing) কী তা নিয়ে রয়েছে নানা মুনির নানা মত। বইয়ের ভাষায়, মার্কেটিং হলো ‘প্রোডাক্ট (product) বা সার্ভিসে (service) ভ্যালু (value) যোগ করার মাধ্যমে কাস্টমারের (customer) চাহিদা পূরণ করা’। আর আমি মার্কেটিংকে দেখি এভাবে-Positioning of offering better than the competitor. অর্থাৎ বাজারে আপনার যে কম্পিটিটর আছে তার থেকে চমৎকার কোনো প্রোডাক্ট বা সার্ভিস দিয়ে মানুষের মন জয় করে নেওয়া।

প্রোডাক্ট কিনতে গেলে কাস্টমার সবসময় দুটো জিনিসই মনে মনে চায়:

১) ভ্যালু ফর মানি (value for money)

২) রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট (return of investment)

একজন কাস্টমার প্রোডাক্টের পিছনে যে পরিমাণ খরচ করে, সে সেই পরিমাণ রিটার্ন (return) এবং সার্ভিস চায় ই চায়। এখানে এসে সেলস (sales)-এর একটা বিখ্যাত উক্তি মনে পরে গেলো: “People don’t want to buy feature, they want to buy benefit.”

ব্যাপারটিকে ভিন্নভাবেও ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। মার্কেটিং জগতে কাস্টমার একুইজিশন (acquisition) বাড়ানোর জন্য দুটো বিখ্যাত কন্সেপ্ট রয়েছে:

১) পয়েন্ট অফ প্যারিটি (Point of Parity) – POP

২) পয়েন্ট অফ ডিফারেনশিয়েশন (Point of Differentiation) – POD

এখানে POP মানে হলো, কম্পিটিটর যা যা করছে, তার সব কিছুই আপনাকে নিজের সার্ভিসে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। POP-কে কখনো কখনো মেনটেন্যান্স ফ্যাক্টর (maintenance factor)-ও বলা হয়ে থাকে। উদাহরণ:

আপনি যদি একটা ব্যাংকের মালিক হয়ে থাকেন তবে আপনাকে আপনার কম্পিটিটরের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে অসংখ্য এ.টি.এম বুথ তৈরি করতে হবে। 

আর POD মানে হলো, নির্দিষ্ট প্রোডাক্ট বা বিজনেসের (business) এমন কোনো ফিচার (feature), যেটা আপনার নিজের আছে, কিন্তু কম্পিটিটরের নাই; এবং এটাই আপনার কম্পিটিটর থেকে আপনাকে আলাদা করে তোলবে। যেমন, ফুডপান্ডার (Foodpanda) মতো করে যদি  টাকা ও হোম ডেলিভারি দেওয়া শুরু করা হয়, তবে সেটাকে POD বলা যাবে।

কোকাকোলা (Coca-Cola) এবং পেপসির (Pepsi) নাম সবার পরিচিত। এই দুইটা কোম্পানির মধ্যে সেই ১৯৭০ সাল থেকে কোলা যুদ্ধ চলে আসছে। যারা কাঁচের বোতলের কোকাকোলা বা পেপসি খেয়েছেন, তারা জানেন, আগে দোকান থেকে কোলা কিনলে বোতল বাবদ কাস্টমারের কাছ থেকে কিছু টাকা রেখে দেওয়া হতো। কোলা শেষ করে বোতলটা ফেরত দিতে গেলেই কাস্টমারকে দোকানী বোতলের টাকা ফিরিয়ে দিতেন। কোলা যুদ্ধের এক পর্যায়ে পেপসি খুব মারমুখী হয়ে ওঠে এবং তারা দোকানীকে উৎকোচ দিয়ে কোকাকোলার সমস্ত কাঁচের বোতল ভেঙে ফেলার ব্যবস্থা করে। এই সমস্যার সমাধান হিসেবে কোকাকোলা কাঁচের বোতল বাদ দিয়ে প্লাস্টিকের বোতলে তাদের প্রোডাক্ট বাজারজাত করতে শুরু করে।

এভাবেই মার্কেটে বেটার অফারিং এবং POD তৈরি করে কোকাকোলা। আর প্লাস্টিক বোতলের এই ভ্যালু যোগ হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত কোকাকোলাকে একবারও পিছনে ফিরে তাকাতে হয় নাই। এখনো তারা মার্কেট লিডার (market leader) হিসেবেই টিকে আছে। এভাবেই কম্পিটিটরের তুলনায় ভালো কিছু অফার (offer) করে মানুষের মন জয় করতে পারাই হলো মার্কেটিং। 

অন্যভাবে বলতে গেলে, মার্কেটিং হলো কাস্টমারের প্রয়োজন বোঝা এবং সে অনুযায়ী প্রোডাক্ট, সার্ভিস কিংবা প্রসেসে (process) ভ্যালু যোগ করা এবং সেই প্রোডাক্ট বা সার্ভিস কাস্টমারের দরজায় পৌঁছে দেওয়া। সেই সঙ্গে সেল (sell)  করে পকেটে টাকা পেয়ে গিয়েও কাস্টমারের খোঁজ-খবর রাখা, যেন সেই কাস্টমার আবারো ফিরে আসে।

আরেকটা প্রশ্ন করি, মার্কেট কাকে বলে?

অনেকেই এই প্রশ্নটির উত্তরে বলেন, মার্কেট মানে হচ্ছে বাজার বা একটা প্লেস (Place) বা লোকেশান (Location), যেখানে বসে বেচা-কেনা হয়।

এই উত্তরটি একই সঙ্গে ঠিক এবং ভুল দুটোই। সাধারণ অর্থে, এটাই বাজারের সংজ্ঞা। কিন্তু মার্কেটিং-এর ভাষায় বাজারের সংজ্ঞা হলো:

“The term Market refers to the group of consumers or potential consumers that is interested in the product.”

হাতে কলমে ডিজিটাল মার্কেটিং প্র‍্যাক্টিস করতে চান?

মার্কেট মানে হলো আমি, আপনি এবং আমরা। আরো ও ডিফাইন করলে আমাদের মধ্য থেকে যারা নির্দিষ্ট কোন কোম্পানীর প্রোডাক্ট কেনে বা কিনতে পারে, তারা। একজন ছাত্রের কথাই ধরা যাক। একজন ছাত্র শার্ট বা থ্রি পিস-এর পটেনশিয়াল (potential) মার্কেট হলেও, সে কিন্তু স্যুট বা ব্লেজারের পটেনশিয়াল মার্কেট না। যেহেতু সে এ ধরনের ফরমাল (formal) পোষাক এখনো পরা শুরু করেনি। 

মার্কেটিং নিয়ে গল্পে চলে যাবার আগে প্রোডাক্টের জন্য আদর্শ মার্কেট খুঁজে বের করা সব থেকে জরুরি। কারণ কাস্টমাররা এখন এতটাই পাওয়ারফুল যে, তারা আর দোকানীর কাছে আসে না, উলটো তাদেরকেই দোকানীর খুঁজে বের করতে হয়।

কাজটা কীভাবে করা যায়, তা একটা উদাহরণের মাধ্যমে দেখি। ইউনিলিভার (Unilever)-এর হেয়ার কেয়ার ক্যাটাগরিতে (hair care category) খুবই বিখ্যাত একটি ব্র্যান্ড (brand) হলো সানসিল্ক (Sunsilk)। ধরা যাক, সানসিল্ক মার্কেটে আসার আগে তাদের মার্কেট সেগমেন্ট (segment) করা হয়েছিল এভাবে: শুধু মেয়েদের জন্যই শ্যাম্পু বানানো হবে, এবং এ শ্যাম্পু ব্যবহার করবে ১০ বছরের বেশি বয়সের যে কোনো মেয়ে বা মহিলা, যারা বাংলাদেশে বসবাস করে। এভাবেই সানসিল্ক পুরো মার্কেটে কোন শ্রেণির জন্য শ্যাম্পু বানাবে, তার সেগমেন্টেশন (segmentation) করে ফেলল । এবার তারা খেয়াল করল, বাংলাদেশের মেয়েদের চুলের আবার নানা প্রকারভেদ রয়েছে। কারো চুল কোকড়া, কারো সিল্কি (silky), কারো ছোট, কারো বা আবার বড়। তো সানসিল্ক এবার চার ধরনের কাস্টমারের জন্য চার রকম শ্যাম্পু বানানোর পরিকল্পনা করল। 

এবার সানসিল্ক আলাদা আলাদা কাস্টমার বেস (base)-এর জন্য আলাদা আলাদা প্রোডাক্ট বানানো শুরু করল। লম্বা চুলের জন্য সানসিল্ক থিক এন্ড লং (thick & long), কোকড়া চুলের জন্য সানসিল্ক পারফেক্ট স্ট্রেইট শ্যাম্পু (perfect straight shampoo) নাম দিয়ে শুধু লম্বা চুল এবং কোকড়া চুলের মেয়েদেরই নজর কাড়ার চেষ্টা করল।

প্রশ্ন হচ্ছে, এত ঝামেলা না করে সবার জন্য একইরকম একটা শ্যাম্পু বানালে কি চলত না? না, চলত না। কেন চলত না, সেটা সানসিল্ক এর আরেকটা শ্যাম্পুর উদাহরণের মাধ্যমে বোঝা যাবে। ধরা যাক, একজন তরুণী হিজাব পরেন এবং তিনি নন-সানসিল্ক (non-Sunsilk) শ্যাম্পু ব্যবহার করেন। তিনি একদিন টিভিতে দেখলেন, সানসিল্ক-এর নতুন একটি শ্যাম্পু বাজারে এসেছে, যার নাম ‘সানসিল্ক হিজাব শ্যাম্পু’। 

সে মুহূর্তে তিনি ফিল করবেন, সানসিল্ক তার জন্য স্পেশাল (special) শ্যাম্পু বের করেছে। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, পরদিন থেকে হিজাব শ্যাম্পুই ব্যবহার করবেন তিনি। আর এভাবেই কিন্তু একজন নন-সানসিল্ক ব্যবহারকারী সানসিল্ক-এর ইউজার (user) হয়ে যায়।

প্রায়োরিটি (priority) পেতে কে না চায়? কে না চায়, তার স্পেসিফিক প্রব্লেমের জন্য স্পেসিফিল সল্যুশন থাকুক মার্কেটে। 

টার্গেট (target) মার্কেটে টার্গেটেড প্রোডাক্ট অর্থাৎ হিজাব শ্যাম্পু নামিয়ে দেওয়া হলো। এবার সেল করা হবে কার কাছে? অবশ্যই হিজাব পরিহিত তরুণীর কাছেই। এক্ষেত্রে তিনিই নিঃসন্দেহে একজন টার্গেট অডিয়েন্স (audience) বটে। তবে হিজাব শ্যাম্পু কি শুধু সেই তরুণীই কিনবেন? নাহ। বরং তার জন্য এই প্রোডাক্টটি তার বাবা, মা, ভাই, বোন বা হাজব্যান্ড (husband), যে কেউই কিনতে পারেন। তার মানে তারা প্রত্যেকেই কিন্তু এই প্রোডাক্টের টার্গেটেড অডিয়েন্স। কাজেই মার্কেটিং কমিউনিকেশন (communication) হতে হবে টার্গেট অডিয়েন্স কেন্দ্রিক, যেন যে কেউই বিজ্ঞাপন দেখে সেই তরুণীর জন্য হিজাব শ্যাম্পু কেনার প্রেরণা পায়।

তাই বলা যায়: Don’t push people to where you want to be, meet them where they are.

যদি হাতে কলমে কাজ শিখে নিজেকে মার্কেটে স্টাবলিশ করতে চান তবে এখনি এনরোল করে ফেলুন আমার প্রিমিয়াম কোর্স:

​​​​​”Digital Marketing RoadMap” এ…

Share:

"ইফেক্টিভ ফানেল স্ট্রেটিজি" ফ্রি ইবুকটি ডাউনলোড করতে নিচের ফর্মটি ফিলাপ করুন

আরো ব্লগ

লিড জেনারেশন করলে অডিয়েন্স থাকবে হাতের মুঠোয়!!

আমরা যারা অনলাইনে বিজনেস করি আমাদের সব থেকে বড় সমস্যা হচ্ছে আমরা ম্যাসেঞ্জারে ক্লায়েন্টের সাথে ডিল ক্লোজ করতে পারি না। আমরা ম্যাসেজ তো পাই হাজারে

ভিসিবিলিটি ইজ মোর ইম্পরটেন্ট দ্যান এভেইলেবেলিটি

চা খেতে বের হয়েছিলাম। প্রথম চুমুক টা দিতেই অপর পাশের মুদি দোকানে চোখ গেলো। একজন লোক শার্ট প্যান্ট ইন করে তেলের বোতল গোছাচ্ছে। মোটামুটি ১৫/২০

লগরিদম ভাল না লাগলেও আপনাকে এলগরিদম জানাই লাগবে!!

আমরা যারা ফেসবুকের এডভারটাইজমেন্ট নিয়ে কাজ করি আমাদের সব থেকে বড় প্রব্লেমটা কি জানেন?  প্রব্লেমটা হলো আমরা লাখ লাখ টাকার এড  ফেসবুকে ঠিকই চালাই কিন্তু

আই লেভেল ইজ বায় লেভেল!

ইংরেজীতে একটা প্রবাদ আছে, Where there is will, There is a way. আর তাই কাস্টমারের সোস্যাল বিহেভিয়ার বা পারচেজ বিহেভিয়ারে প্রভাব ফেলতে দিনের পর দিন