প্রাইস যত কম হবে সেল তত বেশি হবে, প্রাইস যত বেশি হবে সেল তত কম হবে। এক কথায় ছোট বেলায় বিজ্ঞানে পড়া সূত্রের মত প্রাইস এবং সেল একে অপরের ব্যাস্তানুপাতিক। সুতরাং, এতে যেন এমন প্রাইস সিলেক্ট করা যাবেনা যাতে লস হয়ে যায়৷ এজন্য চাই একটা সঠিক প্রাইসিং স্ট্রাটেজি। এক সার্ভেতে দেখা গেছে প্রাইসিং এ সামান্য ভ্যারিয়েশন এর জন্য রেভিনিউ ৩০-৪০% কম-বেশি হতে পারে। কারণ, বেশিরভাগ বিজনেসই এক বছরে ১২ ঘন্টাও তার প্রোডাক্টের প্রাইসিং নিয়ে ভাবে না। কিন্ত, একটু রিসার্চ করে যদি প্রাইসিং টা করা হত তবে আগের চাইতে ৮ টাইমস বেটার।
আপনার প্রোডাক্ট টি কেনার জন্য কাস্টমার কত টাকা দিতে চাইবে এর চাইতেও বেশি ইম্পর্টেন্ট যে ব্যাপারটা তা হল আপনার সার্ভিসটি কাস্টমারের কাছে কতটা ইম্পর্টেন্ট সেটা। আরেকটা ব্যাপার প্রাইসিং এর ক্ষেত্রে ইম্পর্ট্যান্ট তা হল প্রাইস নির্ধারনের সময় মাথায় রাখতে হবে যে কাস্টমারের বাজেটের চেয়ে বেশি যেন প্রাইসিং না হয়ে যায়। তো এই প্রাইসিং নির্ধারনের ক্ষেত্রে কিছু ট্রিক্স ফলো করলেই হবে বাজিমাত। প্রাইসিং এর ক্ষেত্রে কিছু বিষয় ভুলে গেলে চলবে না। আসুন দেখে নেয়া যাক..
১. মার্কেটে প্রোডাক্টের identity কতটুকু
২. মার্কেটে সেম প্রোডাক্টের প্রাইস কত
৩. এই প্রোডাক্টের Target Audience কারা
৪. টোটাল প্রোডাকশন কস্ট কত। যেমনঃ (raw material, labour cost, machinery cost, transit, inventory cost etc)
৫. এক্সটার্নাল রুলস
আপনার প্রোডাক্টের প্রাইস বেশী হবে নাকি কম সেটা অনেকাংশে নির্ভর করবে Customer Psychology এর ওপর বা Consumer Behaviour এর ওপর। প্রাইস কম হলে কাস্টমার মনে করতে পারে আপনার প্রোডাক্টের কোয়ালিটি খারাপ আবার প্রাইস বেশী হলে ভাবতে পারে এটি তার সাধ্যের বাইরে। এজন্যই effective প্রাইসিং একটি বিজনেসের গ্রোথের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাইসিং এর ক্ষেত্রে আমরা বেশকিছু স্ট্র্যাটেজি ফলো করতে পারিঃ
হাতে কলমে ডিজিটাল মার্কেটিং প্র্যাক্টিস করতে চান?
১.নিউ প্রোডাক্ট প্রাইসিং স্ট্র্যাটেজিঃ
– High price for New Products: নতুন প্রোডাক্টের ক্ষেত্রে প্রাইস বেশী নির্ধারণ করা হলে কাস্টমাররা মনে করে সেটির কোয়ালিটি ভালো। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, প্রাইসিং যেন কাস্টমারেরে এক্সপেক্টেশনকে মিট করে।
বিশেষ করে ইলেকট্রনিক প্রোডাক্টের ক্ষেত্রে এধরণের প্রাইসিং বেশী দেখা যায়। যেমনঃ এ্যপল।
-Low price for New Products: কম্পেটিটিভ মার্কেটে এই স্ট্র্যাটেজি বেশী ব্যবহৃত হয়। সাধারণ কাস্টমারেদের আকর্ষণ করতে এবং প্রোডাক্টটি ব্যবহারে অভ্যস্ত করতে এটি অত্যন্ত কার্যকরী। এক্ষেত্রে প্রোডাক্টের কিছু ফিচার কমিয়ে মার্কেটে আনা হয়। যেমনঃ শাওমি।
২. Product line প্রাইসিংঃ
গুগল ড্রাইভের ৩০ জিবি স্টোরেজ অফার করা হয় ৬ ডলারে এবং আনলিমিটেড স্টোরেজ ১২ ডলারে। এখন এই ৬ ডলার এবং ১২ ডলারের প্যাকেজ কম্পেয়ার করে অধিকাংশ মানুষই চিন্তা করবে আর মাত্র ৬ ডলার যোগ করে সে অনেক বেশী ভ্যালু পাচ্ছে তাই আনলিমিটেড স্টোরেজের প্যাকেজটি কিনে ফেলবে। আবার যদি এখানে যদি মাত্র একটি প্রাইসিং থাকত (৬ বা ১২ ডলারের) তবে কাস্টমার অন্য সাইটে গিয়ে কে কেমন অফার করছে তা কম্পেয়ার করতে চাইত। কিন্তু আপনি যদি নিজের প্রাইসিং এর ক্ষেত্রে অনেকগুলো অপশন রেখে দেন তবে কাস্টমার অন্য কোথাও divert হওয়ার রিস্কও অনেক কমে আসবে।
৩.প্রোডাক্ট বান্ডেল প্রাইসিংঃ
ডেটল হ্যান্ডওয়াশের একটি রিফিলের প্রাইস ৬০ টাকা, কাস্টমার দেখল সুপারমার্কেটে একসাথে ৩টির বান্ডেল ১৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে তখন কাস্টমারের যেখানে ১টাও কেনার ইচ্ছা ছিল না, সেখানে সে ৩০টাকা সেভ হবে চিন্তা করে ৩টির বান্ডেল কিনে বাসায় ফিরবে।
৪. Dynamic প্রাইসিংঃ
এয়ারলাইন্সের টিকেটের প্রাইস প্রথমদিকে কম থাকে কিন্তু ফ্লাইটের সময় যত এগিয়ে আসতে থাকে, প্রাইসও বাড়তে থাকে। মানুষও এজন্য ফ্লাইটের অনেক আগে থেকে টিকেট বুকিং করে রাখে। এই স্ট্র্যাটেজি ফলো করে দ্রুততম সময়ে অনেক বেশী সেল করা যায়।
৫. Cost-Plus প্রাইসিংঃ
এই প্রাইসিং এর সময় manufacturer রা প্রোডাক্ট কস্টিং এর সাথে নির্দিষ্ট পরিমাণ একটা পার্সেন্টিজ কাউন্ট করে যা mark up হিসেবেও ধরা হয়।
৬. Penetration প্রাইসিংঃ
এই প্রাইসিংটা মূলত প্রোডাক্ট লঞ্চ হওয়ার পর প্রথম দিকে মার্কেটে ছাড়া হয় যখন Promotion period এবং Market share এচিভ হয়ে যায় তারপর প্রোডাক্ট এর দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়।
৭. Skimming প্রাইসিংঃ
এই প্রাইসিং স্ট্রাটেজি Penetration প্রাইসিং স্ট্রাটেজি থেকে একদম উলটো অর্থাৎ এই প্রোডাক্টটির দাম প্রথমে সর্বোচ্চ দেয়া হয় এরপর যখন আস্তে আস্তে মার্কেট ডিমান্ড কমতে থাকে তখন প্রোডাক্টের প্রাইস কমিয়ে বিভিন্ন অফার দেওয়া হয়।
এছাড়াও প্রাইসিং কাস্টমারের সামনে প্রেজেন্ট করার সময় কিছু সাইকোলজিকাল ট্রিকস ব্যবহার করা হয়। যার ফলে কাস্টমার শুধুমাত্র প্রাইসিং দেখে এট্রাক্টিভ হয়ে থামে। যেমনঃ
-Reduce the left digit by one.
প্রাইস ৩০০ টাকা থেকে সেটিকে ২৯৯ করে দেওয়া। এই একটি ডিজিট আপনার সেলস কে প্রায় দ্বিগুণ করে দিতে সক্ষম।
–Display prices in a smaller font.
প্রাইস ছোট ফন্টে লিখলে সেটিকে কম কম বলে মনে হয় কাস্টমারদের কাছে।
-Remove the comma
পড়তে কম সময় লাগলে প্রাইসও কম মনে হয়। যেমন ১,৫৯৯ এর চাইতে ১৫৯৯ দ্রুত পড়া যায় এবং তুলনামূলক কম মনে হয়।
যা যা কস্ট আপনার প্রোডাক্ট এর সাথে এড হবে সবকিছু যদি একবারে ভাবতে যান তবে হয়তো মাথা ঘুরিয়ে যাবেঃ Production Cost, Compitition, Customer Demand, Industry Gap, Profit Margin ইত্যাদি ইত্যাদি মিলিয়ে অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে আপনার প্রোডাক্টের প্রাইসিং। কিন্ত মজার বিষয় হল, আপনার এত্ত কিছু নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে না। ঠান্ডা মাথায় বসে অল্প কয়েকটা জিনিস জাস্ট হিসাব করুন এবং আপনার বিজেনেসের ইম্পর্টেন্ট পার্ট কোনটা তা খুজে বের করুন।
একটা বিষয় আপনাকে মাথায় রাখতেই হবে প্রাইসিং করতে গিয়ে। সেটা হল প্রাইসিং হয়তো একবারে ব্যাটে বলে নাও হতে পারে। এজন্য আপনাকে কয়েক দফায় প্রাইস চেঞ্জ এবং অনেক রিসার্চ করতে হবে। তবে যে স্ট্রাটেজি গুলো আমরা উপরে দেখেছি ট্রাই করতে থাকুন ভালো ফলাফল আসবেই।