মার্কেটিং করুন একদম ফ্রিতে!!

সারাজীবন তো শুনে এসেছেন বিজনেস করতে হলে অবশ্যই ইনভেস্ট করা লাগে। কিন্ত, এবার যদি আপনাদের জন্য শূন্য টাকায় মার্কেটিং শেখাই তাহলে ব্যাপারটা কেমন দাঁড়ায়?

ছোট বিজনেস এর ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় দেখা যায় হাত খুলে ইনভেস্ট করা সম্ভব হয়না। প্রোডাকশন আর অফিস স্পেসের পেছনেই বেশি কস্টিং হয়ে যায়। তাছাড়া নিউজপেপার এড, বিলবোর্ড কিংবা টিভি কামার্শিয়াল টাইপের এডে খরচ থাকে প্রায় ৬ ডিজিটের উপরে। 

এক সার্ভেতে দেখা গেসে ২০২৬ সালে গ্লোবাল এডভার্টাইজমেন্ট স্পেন্ডিং পৌছাবে প্রায় ৮৮০ বিলিয়ন ডলারে। তাছাড়া এখন ধীরে ধীরে টিভি কমার্শিয়াল কিংবা নিউজপেপার এড গুলোর চেয়ে ওয়েবসাইট কিংবা সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর চাহিদা এবং রেজাল্ট ও বেড়েছে।

কিন্ত, কথা হল ছোট ছোট বিজনেস এর ওউনার যারা আছেন তারা কি করবেন। মার্কেটিং আর এডভার্টাইজমেন্ট ছাড়া আপনার বিজনেস বিকল হয়ে যাবে। ভাবুন তো, কেমন হতো? যদি আপনার বিজনেস এর মার্কেটিং একেবারে শুন্য টাকায় করতে পারতেন? শুন্য টাকার এই মার্কেটিংকে  মূলত বলা হয় ZSC বা Zero Strategy Cost বা Free Cost Marketing অর্থাৎ কোনো টাকা খরচ না করেই মার্কেটিং করা। চলুন দেখে আসা যাক সেই মার্কেটিং এর ওয়েগুলো।

১. আপনার ওয়েবসাইটে এস.ই.ও করুনঃ

কিছু কিছু মার্কেটিং এজেন্সি এমন ভাব করে যেন পৃথিবীতে একমাত্র তারাই এস.ই.ও পারে আর কেউ পারেনা তাই তাদের থেকেই যেন সার্ভিস নেই। আপনার যদি অনেক টাকা থাকে তবে আপনি একজন এস.ই.ও প্রফেশনাল হায়ার করতে পারেন। কিন্ত, টাকা না থাকলে আপনি নিজে নিজেও কিছু বেসিক নিয়ম ফলো করে সহজেই আপনার ওয়েবসাইটের বেসিক এস.ই.ও করে ফেলতে পারবেন। জাস্ট কিছু, কমন কিওয়ার্ড আপনার বিজনেসের জন্য রিসার্চ করে সেগুলো বিভিন্ন জায়গায় রেশিও ঠিক রেখে এক্সিকিউট করার মাধ্যমে সহজেই এস.ই.ও করা যেতে পারে।

২. ইমেইল করুনঃ

ইমেইল মার্কেটিং হল মার্কেটিং এর অনেক পুরনো একটা ওয়ে এবং ইফেক্টিভ ও বটে। আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল এটি সম্পূর্ণই ফ্রি। বিভিন্ন লিড জেনারেশন ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে সহজেই আপনি মেইল কালেক্ট করে নিতে পারেন। এতে আপনি নরমাল ভাবেই বুঝে যাবেন যে এই ব্যাক্তিগুলো আপনার প্রোডাক্ট সম্পর্কে ইন্টারেস্টেড। সো, তাদের কাছে সহজেই আপনি ইমেইল মার্কেটিং করে ফেলতে পারবেন একেবারেই ফ্রিতে।

৩. জমজমাট করুন ফেসবুক মার্কেটিংঃ

প্রতিদিন ২.৩ বিলিয়ন মানুষ ফেসবুক ইউজ করে থাকে। এটি হল ইন্টারনেটে ব্যবহৃত সর্বোচ্চ ৩য় ওয়েবসাইট ইউজারের মধ্যে একটি। ৯৩% বিজনেস ওউনার ফেসবুকের মাধ্যমে এড দিয়ে থাকে। তাছাড়া, ফেসবুকের মাধ্যমে সহজেই আপনার বিজনেসের মার্কেটিং করতে পারেন। এতে প্রথমে আপনাকে একটি প্রফেশনাল পেইজ খুলে নিতে হবে। সেখানে নিয়মিত আপনার বিজনেস রিলেটেড ইমেজ, ভিডিও, লেখালেখি পোস্ট করতে হবে। এবং কিছু কাস্টমার রিভিউ পেইজে নিয়ে নিলেই সহজেই ফ্রিতে আপনার ব্যবসার ফেসবুক মার্কেটিং হয়ে যাবে। তাছাড়া আপনার Sales Pitch টা হতে হবে আরো প্রফেশনাল। Sales Pitch মূলত কাস্টমার বা ক্লায়েন্টের কাছে আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিস রিপ্রেজেন্ট করার ওয়ে। Sales Pitch মেইনলি ৩টি বিষয় দিয়ে সহজেই বাজিমাত করা যায়ঃ

হাতে কলমে ডিজিটাল মার্কেটিং প্র‍্যাক্টিস করতে চান?

১. Strong Value Proposition:

আপনার প্রোডাক্ট কাস্টমারের লাইফে কি ভ্যালু এড  করতে পারবে।

২. Social Proof:

সোশ্যাল প্রুফ বলতে মূলত কাস্টমার এর দেয়া প্রোডাক্ট রিভিউ বুঝায়।

৩. Undiscovered Value:

আপনার প্রোডাক্ট এর ইউনিক ভ্যালু কাস্টমারের সঙ্গে তুলে ধরার চেষ্টা করুন।

৪. কোরা তে নিয়মিত প্রশ্নের উত্তর দিনঃ

কোরাতে প্রতি মাসে ৩০০ মিলিয়ন মানুষ বিভিন্ন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে এবং তার উত্তর দিয়ে থাকে। কোরাতে লেখালেখির মাধ্যমে সহজেই আপনাকে এবং আপনার বিজনেসকে মানুষ সহজেই চিনতে পারে ফ্রিতেই। সো, আপনার বিজনেস রিলেটেড প্রশ্নের উত্তর দিয়ে সহজেই আপনি কোরা তে  ভাল একটা এনগেজমেন্ট তৈরি করে ফেলতে পারেন।

৫. ইউটিউব ভিডিওর মাধ্যমেঃ

ইউটিউব হল বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবহৃত সার্চ ইঞ্জিন যার অবস্থান গুগলের ঠিক পরেই। বর্তমানে প্রায় ১.৩ বিলিয়ন ইউজার আছে। এখানে আপনি ফ্রিতেই ভিডিও আপ্লোড করতে পারবেন এবং মানুষ ভিডিও দেখলে আপনার ব্রান্ডিং, মার্কেটিং তো ফ্রিতেই হবে।

৬. ফ্রি কোর্স বানিয়ে ফেলুনঃ

Techable কিংবা Skillshare এর মত সাইটগুলোর হেল্প নিয়ে সহজেই আপনি বিভিন্ন ভিডিও, ওয়ার্কবুক কিংবা স্লাইডের মাধ্যমে ফ্রি কোর্স বানিয়ে ফেলতে পারেন। যার মাধ্যমে আপনার কাছে আপনার টার্গেটেড অডিয়েন্সরা সহজেই আপনার সম্পর্কে ফ্রিতে জেনে যাবে।

৭. একটি ওয়েবসাইট বানিয়ে নিনঃ

লক্ষ করে দেখবেন, এতক্ষন যতগুলো ট্রিক শেয়ার করেছি তার বেশিরভাগেরই কিন্ত ওয়েবসাইট দরকার। একটি ওয়েবসাইট বানাতে প্রায় ১-১.৫ লাখ টাকা লেগে যায়। তবে, আপনি যদি ছোট বিজনেস ওউনার হন তবে ভয় পাবার কিছু নেই। WordPress কিংবা Wix ব্যবহার করে আপনি ফ্রিতে বা অল্প খরচে নিজের একটি ওয়েবসাইট ক্রিয়েট করে নিতে পারেন। এর মাধ্যমে ড্রাগ এবং ড্রপের মাধ্যমে সহজেই প্রিমিয়াম একটি সাইট সহজেই ডিজাইন করে ফেলতে পারবেন।

৮. টিমআপ করে Cross Promotion করাঃ

Cross Promoton বলতে বুঝায় আপনি একজনকে ফ্রিতে একটা প্রোমোট করে দিবেন আবার সেও আপনাকে ফ্রিতে প্রোমোট করে দিবেন। অনেক অনেক বড় বড় ইনফ্লুয়েন্সারদের Cross Promoting করতে দেখা যায়।

৯. In-person নেটওয়ার্কিং করেঃ

এই ধরনের মার্কেটিং মূলত মানুষ ব্যবহার করে মার্কেটিং করাকে বুঝায়। সে হতে পারে আপনার এক্সিস্টিং কাস্টমার বা এফিলিয়েটর। যেমনঃ এফিলিয়েশন, মিউচুয়াল কাস্টমার ইন্টারেকশন। এই গুলো সবই In-person নেটওয়ার্কিং এর আওতাভুক্ত। এইযে একজন পারসন থেকে অন্য পারসনে আপনার বিজনেস মার্কেটিং হয়ে যাচ্ছে এটাকে মার্কেটিং এর ভাষায় WOM বা Word of Mouth Marketing বলে।

১০. ব্লগিং করে Social Buzz তৈরি করাঃ

আপনার যদি একটি ওয়েবসাইট থাকে তবে ব্লগ সেকশন রাখাটা খুবই জরুরি। কেননা, ব্লগের মাধ্যমে আপনি সহজেই অর্গানিক ট্রাফিক জেনারেট করতে পারবেন। ননস্টপ Social Buzz তৈরির ক্ষেত্রে ব্লগিং অনেক হেল্পফুল। যার ফলে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া থেকে আপনি অডিয়েন্স পাবেন। তাছাড়া, ব্লগিং এ আপনি HARO – Hep a Reporter Out কন্সেপ্ট ব্যবহার করতে পারেন। যেখানে আপনি ব্যাকলিংক তৈরি করে আরো বেটার মিডিয়া কভারেজ পাবেন।

উপরের টিপস গুলো ফ্রিতে আপনার ব্রান্ডিং এবং মার্কেটিং এর জন্য দেয়া হলেও এগুলোই কিন্ত কখনোই ১০০% ব্রান্ডিং এবং মার্কেটিং কভার করবে না। বিভিন্ন মার্কেটিং স্ট্রাটেজি বার বার ট্রায়াল করতে হবে। তাছাড়া, কোনো একটি স্ট্রাটেজি যদিও কাজ করে যায় তবুও লাভের মুখ দেখতে হলে সময় নিতে হবে। সো, চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকুন এবং একটা সময় পর যেয়ে দেখবেন এই ফ্রি মার্কেটিং আপনাকে ঠিকই ফল দিচ্ছে।

যদি হাতে কলমে কাজ শিখে নিজেকে মার্কেটে স্টাবলিশ করতে চান তবে এখনি এনরোল করে ফেলুন আমার প্রিমিয়াম কোর্স:

​​​​​”Digital Marketing RoadMap” এ…

Share:

"ইফেক্টিভ ফানেল স্ট্রেটিজি" ফ্রি ইবুকটি ডাউনলোড করতে নিচের ফর্মটি ফিলাপ করুন

আরো ব্লগ

লিড জেনারেশন করলে অডিয়েন্স থাকবে হাতের মুঠোয়!!

আমরা যারা অনলাইনে বিজনেস করি আমাদের সব থেকে বড় সমস্যা হচ্ছে আমরা ম্যাসেঞ্জারে ক্লায়েন্টের সাথে ডিল ক্লোজ করতে পারি না। আমরা ম্যাসেজ তো পাই হাজারে

ভিসিবিলিটি ইজ মোর ইম্পরটেন্ট দ্যান এভেইলেবেলিটি

চা খেতে বের হয়েছিলাম। প্রথম চুমুক টা দিতেই অপর পাশের মুদি দোকানে চোখ গেলো। একজন লোক শার্ট প্যান্ট ইন করে তেলের বোতল গোছাচ্ছে। মোটামুটি ১৫/২০

লগরিদম ভাল না লাগলেও আপনাকে এলগরিদম জানাই লাগবে!!

আমরা যারা ফেসবুকের এডভারটাইজমেন্ট নিয়ে কাজ করি আমাদের সব থেকে বড় প্রব্লেমটা কি জানেন?  প্রব্লেমটা হলো আমরা লাখ লাখ টাকার এড  ফেসবুকে ঠিকই চালাই কিন্তু

আই লেভেল ইজ বায় লেভেল!

ইংরেজীতে একটা প্রবাদ আছে, Where there is will, There is a way. আর তাই কাস্টমারের সোস্যাল বিহেভিয়ার বা পারচেজ বিহেভিয়ারে প্রভাব ফেলতে দিনের পর দিন