যেভাবে লিংকডিন প্রোফাইল গুছালে ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরে যাবে!

আপনি হয়তো ভাবছেন লিংকডিন প্রোফাইল গুছিয়ে কি হবে কিংবা লিংকডিন প্রোফাইল এতদিন তো প্রয়োজন পড়েনি এখনই বা কেন প্রয়োজন হবে অথবা কে দেখে এই লিংকডিন প্রোফাইল!!!  

বিশ্বাস করুন আর নাই করুন এই লিংকডিন প্রোফাইল ই হতে পারে আপনার ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেয়ার একটা অন্যতম মাধ্যম। আর যদি আপনি একজন মিডিয়া বায়ার হয়ে থাকেন বা হবেন বলে ভাবছেন তাইলে তো কথাই নাই। কারণ ক্লায়েন্ট তো এখন সব লিংকডিনেই রে ভাই। আজকে আপনাকে এই লিংকডিন প্রোফাইল কেই কিভাবে প্রোফেশনালভাবে তৈরি করতে পারেন তা শিখিয়ে দিব হাতে কলমে।

আপনি হয়তো পারসোনাল ব্রান্ডিং এর পেছনে সময় দিতে ইগো কাজ কর‍তে পারে বা লজ্জা পেতে পারেন। আমরা যখন পারসোনাল ব্রান্ডিংকেই এড়িয়ে চলি তখন আমরা অনেক বড় একটা অপরচিউনিটি হারিয়ে ফেলি। অথচ, লিংকডিনে পারসোনাল ব্রান্ডিং করতে পারলে সহজেই কিন্তু আপনি অন্যদের থেকে আলাদা ভাবে নিজেকে প্রেজেন্ট করতে পারবেন।

কেননা, এই প্রোফাইল দিয়েই ফিউচারে যখন আপনি মিডিয়া বায়ার হিসেবে কাজ করবেন তখন মার্কেটপ্লেসের বাহিরের ক্লায়েন্ট খুঁজে পাবেন। তাছাড়া, আপনাকে কেউ হায়ার করার আগে আপনার লিংকডিন প্রোফাইল টি ঘুরে দেখতে চাইতে পারে। আর তখন যদি প্রোফাইলটি গুছানো থাকে হয়তো আমাকে আপনি ভুলে যাবেন ঠিকই কিন্ত আপনার আজকে এই লিংকডিন প্রোফাইল গুছানোর জন্য নিজেকে ধন্যবাদ দিতে ভুলবেন না এই ভেবে যে, “ভাগ্যিস, প্রোফাইল টা আগেই প্রোফেশনালি গুছিয়ে রেখেছিলাম”। সবচেয়ে মজার ব্যাপার, সমস্ত রিক্রুটারদের মধ্যে ৮৭ শতাংশ ই বেস্ট ওয়ার্কারদের খুঁজে বের করার জন্য একটি বেস্ট মাধ্যম হিসেবে লিংকডিন ব্যবহার করেন।

সুতরাং, কিভাবে আপনার প্রোফাইল কে স্ট্যান্ড আউট করে তুলবেন?  কিভাবে আরো রিকমেন্ডেশন পেতে পারেন? কোন কোন জিনিসগুলো আপনাকে আপনার প্রোফাইল আরো কোয়ালিটিফুল করতে হেল্প করতে পারে? আমাদের ধাপে ধাপে কিভাবে একটি প্রফেশনাল লিঙ্কডইন প্রোফাইল তৈরি করতে করতে পারি সবকিছু শিখব ইনশাআল্লাহ।

হাতে কলমে ডিজিটাল মার্কেটিং প্র‍্যাক্টিস করতে চান?

বেসিক ধারণাঃ

একটি লিংকডিন প্রোফাইল বানানোর আগে, এটুকু নিশ্চিত হোন যে ইমেইল এর ইনবক্স আপনি প্রায়ই চেক করেন। কি করেন তো? এরপর আপনার প্রোফাইলে একটি মোবাইল নম্বর এড করতে ভুলবেন না অবশ্যই। কেননা আপনার সাথে যোগাযোগ করার জন্য যত বেশি উপায় খোলা রাখবেন, তত ভালো! কেউ হয়তো চাইবে মেইলে যোগাযোগ না করে ডিরেক্ট কল করে আপনার সাথে কথা বলতে। এরপর আপনি যখন আপনার বেসিক ইনফরমেশন গুলো এড করতে থাকবেন তখন আপনাকে বর্তমান কর্মঅবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে। যারা বেকার তারা “বর্তমানে চাকরি খুঁজছেন” ব্যবহার  করতে পারেন। এটি ফিউচারে আপনাকে চাকরি পেতে হেল্প করবে। 

একাউন্টের ধরণঃ

এরপর আপনাকে দুইটি অপশন থেকে একটি অপশন বেছে নিতে হবে যেখানে আপনি সিলেক্ট করতে পারবেন আপনার লিংকডইন অ্যাকাউন্ট টি কি ধরনের অ্যাকাউন্ট হবে, ফ্রি হবে নাকি প্রিমিয়াম একাউন্ট হবে! তাছাড়া আপনি প্রিমিয়াম একাউন্ট নেওয়ার পর এক মাস ফ্রী ট্রায়াল ইউজ করতে পারবেন এর মধ্যে যদি আপনার মনে হয় যে আপনার সিদ্ধান্তটি পরিবর্তন করতে চাচ্ছেন তাহলে আপনি আপনার প্রিমিয়াম সাবস্ক্রিপশনটি ক্যানসেল করেও দিতে পারবেন। 

ছবি আপ্লোডঃ

লিংকডইনে ছবির কথা আসলেই প্রফেশনালিজম হলো প্রথম শর্ত। সুতরাং প্রথমেই একটি ক্যামেরায় তোলা কিংবা মোবাইলে তোলা প্রফেশনাল ছবি প্রোফাইলে এড করে ফেলুন। কমপক্ষে ২০০x২০০ পিক্সেলের একটি ফটো ব্যবহার করুন; এক্সট্রা থাকলে সেটি ব্লার দেখাবে। মনে রাখবেন নরমাল ছবি ব্যবহার না করে প্রফেশনাল ছবি ব্যবহার করলে আগের চাইতে ২১ গুণ বেশি প্রোফাইল ভিজিট পাবেন এবং ৩৬ গুণ বেশি মেসেজ পাবেন। সুতরাং, প্রফেশনাল ছবি ব্যবহার করতে কখনো ভুলবেন না। 

এক্সপেরিয়েন্স নিয়ে কথা বলুনঃ

জব সিকারদের জন্য এইখানে হইলো একটা আসল খেলা।  সুতরাং, এটা নিশ্চিত করবেন যে জব এক্সপেরিয়েন্স এর মধ্যে যেন আপনি যা যা পারেন সবকিছুই ফুটে ওঠে। আপনি চাইলে প্রত্যেকটা জব এক্সপেরিয়েন্স ই আলাদা আলাদা ভাবে লিখতে পারেন কিংবা আপনি চাইলে একটা সিভি অ্যাড করে রাখতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে আমার সাজেশন হবে আপনি সিভি ইমপোর্ট করার মাধ্যমে ডেটা গুলোকে লিঙ্কডইনে দিবেন এরপর সে গুলোকে আপনি পরে আরো সুন্দর করে সাজাতে পারবেন। এক্সপেরিয়েন্স লেখার সময় আপনার বর্তমান জবের এক্সপেরিয়েন্স থেকে শুরু করে ক্রমাগতভাবে পুরনো জবের এক্সপেরিয়েন্স লিখবেন। 

এডুকেশনঃ 

এডুকেশন এড করার সময় আপনার প্রত্যেকটা স্কুল-কলেজ লিংকডইনের প্রোফাইলে এড করতে ভুলবেন না কেননা এর মাধ্যমে আপনার বিভিন্ন পুরাতন ফ্রেন্ডের সাথে আপনি কানেক্ট হতে পারবেন। 

এখানে স্কিল সেকশনে আপনার স্কিল সম্পর্কে বিস্তারিত লিখতে ভুলবেন না কেননা এটি সার্চ সেকশনে কিওয়ার্ড হিসেবে কাজ করে। এখানে আপনার এক্সপেরিয়েন্স এর কথা বলার পাশাপাশি আপনার গোল সম্পর্কেও কথা বলতে ভুলবেন না। 

মাইন্ড ব্লোয়িং হেডলাইনঃ

হেডলাইনে আপনি যা লিখবেন সেটি লিংকডইন প্রোফাইলে আপনার নামের পাশে শো করবে। এই হেডলাইন অপশনটি আপনার ফার্স্ট ইম্প্রেশন তৈরি করার জন্য অসাধারণ সুযোগ। সুতরাং, এখানে আপনি অল্প শব্দে যত পারেন বলার চেষ্টা করুন। হেডলাইনটিকে যতটা সম্ভব ইন্টারেস্টিং করার চেষ্টা করুন। হেডলাইনটি আপনার কানেকশনস যারা থাকবে তাদের কে আপনার প্রোফাইলটি ভিজিট করার জন্য হুক হিসেবে কাজ করবে। যেমনঃ Marketing Professionals, Lead Media Buying Strategist of LifeSpring

এক্সট্রা ইনফরমেশন এড করুনঃ

লিংকডিন আপনাকে আপনার পড়াশোনার বাহিরেও এক্সট্রা ইনফরমেশন এড করার সুযোগ দেবে সুতরাং এবার হল এই সুযোগটি কাজে লাগানোর আসল সময়। যেমন হতে পারে আপনার এমন একটা হবি আছে যা দিয়ে রিক্রুটারের চোখে পড়ে যেতে পারেন। সেটা হতে পারে আপনার কোনো ক্রাফটিং হবিও।

রিভিশন রিভিশন রিভিশনঃ

এবার আমাদের প্রোফাইল মোটামুটি রেডি হয়ে গেছে এখন প্রথম থেকে তিনবার চেক করুন। অবশ্যই চেক করবেন যে আপনার চাকরির সময়কাল এবং শিক্ষাজীবনের সময়কাল ঠিক আছে কিনা। আর হ্যাঁ ভালো কথা, আপনার প্রোফাইলের সামারি টি Grammarly থেকে চেক করে নিতে ভুলবেন না।   

ব্যাস, তৈরী হয়ে গেল আপনার সোনার টুকরার লিংকডইন প্রোফাইল টি। এবার প্রোফাইলটিকে আরো বেটার সার্চ ভিজিবল করার পালা। কেননা, লিংকডিন এ প্রত্যেকেই চায় বর্তমানের চেয়ে আরো বেটার একটা জব পেতে। এজন্য, এই প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাঝে নিজেকে কিভাবে আলাদাভাবে ফুটিয়ে তোলা যায় সেটিই আমরা দেখব।

একটি ভিডিও এড করুনঃ

প্রথমেই প্রোফাইলে একটি ভিডিও এড করতে হবে যেখানে থাকবে আপনি কে?  আপনি কি করেন? আপনার স্কিল গুলো কি? আপনার ভাল লাগা বা খারাপ লাগা ইত্যাদি…এরপর ভিডিওটি একটি ভিডিও শেয়ারিং ওয়েবসাইটে আপলোড করে লিংকটি আপনার প্রোফাইলে এড করে দিন। 

কোথাও ফিচারড হলে এড করুনঃ

আপনার লেখা যদি কোন বড় কোন পাবলিকেশন্স কিংবা কোন ম্যাগাজিন কিংবা কোন পত্রিকায় প্রকাশ হয়ে থাকে তবে সেটি অ্যাড করে দিন। 

একটা পোর্টফলিও তৈরি করুনঃ

আপনার তথ্য যদি অনেক ব্রড হয়ে থাকে তাহলে সবগুলো তথ্যকে একটা জায়গায় একসাথে করে একটা পোর্টফলিওতে রেখে সেই লিংকটি লিংকডইন প্রোফাইলে এড করে দিতে পারেন।

লিংকডইন প্রোফাইল তো গুছানো হয়ে গেলো। এবার লিংকডইন এ কি কি ভুল করা যাবে না তা দেখে নেয়া যাক..

১. অন্যান্য প্লাটফর্ম এর মত লিংকডইন রাফভাবে ব্যবহার না করে প্রফেশনালি ব্যাবহার করতে হবে। 

২. যেকোনো নেটওয়ার্কিং এর সুযোগ পেলে হাতছাড়া করা যাবে না।

৩. লিংকডইনে অতিরিক্ত সময় না দেয়া।

এবার আসেন লিংকডইনে কি কি কাজ করলে মানুষের এটেনশান পাওয়া যাবে দেখি: 

সবার শুরুতে ধুমাইয়া কন্টেন্ট লেখা শুরু করুন। আপনি যেই ইন্ডাস্ট্রি বা সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়তে চান সেই সেক্টরে সম্পর্কে কেস স্টাডি বা নিজের এক্সপেরিয়েন্স শেয়ার করতে থাকুন। আর বেশি বেশি আপনার ইন্ডাস্ট্রি এর মানুষদের সাথে কানেক্ট হওয়া শুরু করুন। আর প্রত্যকের পোস্টের কমেন্টে গিয়ে গঠনমূলক কমেন্ট করতে থাকুন। ব্যাস দেখবেন অনেকের সাথেই আপনার ভালো নেটওয়ার্কিং হয়ে যাবে। আর পরে এই নেটওয়ার্কিং কাজে লাগিয়ে আপনি নিজের জন্য কাজ বের করে নিতে পারবেন।

সো আপনার লিংকডইন প্রোফাইল তো রেডি। এখন সময় প্রফেশনালি ডাইভ দেয়ার।

যদি হাতে কলমে কাজ শিখে নিজেকে মার্কেটে স্টাবলিশ করতে চান তবে এখনি এনরোল করে ফেলুন আমার প্রিমিয়াম কোর্স:

​​​​​”Digital Marketing RoadMap” এ…

Share:

"ইফেক্টিভ ফানেল স্ট্রেটিজি" ফ্রি ইবুকটি ডাউনলোড করতে নিচের ফর্মটি ফিলাপ করুন

আরো ব্লগ

লিড জেনারেশন করলে অডিয়েন্স থাকবে হাতের মুঠোয়!!

আমরা যারা অনলাইনে বিজনেস করি আমাদের সব থেকে বড় সমস্যা হচ্ছে আমরা ম্যাসেঞ্জারে ক্লায়েন্টের সাথে ডিল ক্লোজ করতে পারি না। আমরা ম্যাসেজ তো পাই হাজারে

ভিসিবিলিটি ইজ মোর ইম্পরটেন্ট দ্যান এভেইলেবেলিটি

চা খেতে বের হয়েছিলাম। প্রথম চুমুক টা দিতেই অপর পাশের মুদি দোকানে চোখ গেলো। একজন লোক শার্ট প্যান্ট ইন করে তেলের বোতল গোছাচ্ছে। মোটামুটি ১৫/২০

লগরিদম ভাল না লাগলেও আপনাকে এলগরিদম জানাই লাগবে!!

আমরা যারা ফেসবুকের এডভারটাইজমেন্ট নিয়ে কাজ করি আমাদের সব থেকে বড় প্রব্লেমটা কি জানেন?  প্রব্লেমটা হলো আমরা লাখ লাখ টাকার এড  ফেসবুকে ঠিকই চালাই কিন্তু

আই লেভেল ইজ বায় লেভেল!

ইংরেজীতে একটা প্রবাদ আছে, Where there is will, There is a way. আর তাই কাস্টমারের সোস্যাল বিহেভিয়ার বা পারচেজ বিহেভিয়ারে প্রভাব ফেলতে দিনের পর দিন