লগরিদম ভাল না লাগলেও আপনাকে এলগরিদম জানাই লাগবে!!

আমরা যারা ফেসবুকের এডভারটাইজমেন্ট নিয়ে কাজ করি আমাদের সব থেকে বড় প্রব্লেমটা কি জানেন?  প্রব্লেমটা হলো আমরা লাখ লাখ টাকার এড  ফেসবুকে ঠিকই চালাই কিন্তু আমরা কেও ই ভালো মতন ফেসবুক এলগরিদম বুঝি না।

আপনি  যেনে অবাক হবেন যে পৃথিবীর ৪ ভাগের ১ ভাগ মানুষ মানে সংখ্যায় হিসাব করলে  প্রায় ১.৯ বিলিয়ন মানুষ ফেসবুক ব্যাবহার করে। আরেকটা স্ট্যাটস্টিকস এ  দেখা গেছে  ২০০ মিলিয়ন বিজনেস ফেসবুককে ব্যাবহার করে তাদের বিজনেস করে যাচ্ছে।  আর  পৃথিবীর ৯৩% মার্কেটার ই ফেসবুকের উপর ডিপেন্ড করে।

তাই ফেসবুক  এলগরিদম, আপনার ভালো লাগুক বা নাই লাগুক আপনার বিজনেস কে বিশ্বের সবচেয়ে  বড় সোশ্যাল মিডিয়া (ফেসবুকে) প্লাটফর্মে  মার্কেটিং করাতে হলে ভাল ভাবে ফেসবুক এলগরিদম  জানতেই হবে।  কারণ যেকোনো পেইজে পোস্ট করলে অর্গানিক ভাবে মাত্র ০.০৭% এনগেজমেন্ট পাওয়া যায়।  এই রেটকে আরো বাড়াতে চাইলে এলগরিদম সিগনাল ভাল ভাবে জানতেই হবে। আপনাকে  এটুকু এনসিউর করতে হবে যেন আপনার কন্টেন্ট গুলো অডিয়েন্সের জন্য অথেনটিক,  ভ্যালুয়েবল হয় এবং ঠিক ঠাক অডিয়েন্সের নিউজফিডে যায়।

প্রথমেই আমরা বুঝে নেই ফেসবুক এলগরিদম কি!!! ফেসবুক এলগরিদম হলো এমন একটা জিনিস যেটা এটা নিশ্চিত করে যে একজন অডিয়েন্স তার নিজের নিউজফিডে কোন কন্টেন্ট দেখবে এবং কোনটার পর কোনটা  দেখবে। 

আর ফেসবুক এই এলগরিদম ব্যাবহার করে সবচেয়ে ভালো কন্টেন্ট কে প্রথমে আর খারাপ কন্টেন্টকে পরের দিকে ক্রমানুসারে সাজিয়ে নিউজফিডে শো করে এবং এই প্রসেস প্রতি ইউজারদের সাথেই ঘটে থাকে। ফেসবুকের ভাষায়, ফেসবুক এলগোরিদম এর উদ্দেশ্যই থাকে ইউজারদের কে নতুন কন্টেন্ট এবং তাদের বেশি ইন্টারেস্ট যে কন্টেন্টে থাকে সেটাকেই বেশি বেশি করে দেখাতে পারা। অবশ্য, ফেসবুক এখন কন্টেন্টের কোয়ালিটির পাশাপাশি প্রাইভসিকেও খুব  প্রায়োরটি দিচ্ছে।  

হাতে কলমে ডিজিটাল মার্কেটিং প্র‍্যাক্টিস করতে চান?

সময়ের বিবর্তনে ফেসবুক এলগরিদম নানা ভাবে চেঞ্জ হয়েছে। ফেসবুক ২০০৬ সালে  লঞ্চ হবার পর থেকে ৭০ বার তাদের এলগোরিদম চেঞ্জ করেছে তাদের বিজনেসের  প্রয়োজনে।

২০০৯ঃ এই সময়ে সবচেয়ে বেশি লাইক ওয়ালা পোস্টটি নিউজফিডের টপে থাকতো।

২০১৫ঃ যেসব পেইজ বেশি প্রোমোশনাল পোস্ট করে তাদেরকে ফেসবুক কম র‍্যাংক দিত। আর নতুন ফিচার যুক্ত হয় এই সময়ে “See first” নামে। যার মাধ্যমে ইউজাররা তাদের প্রিয় পেইজকে ইন্ডিকেট করে রাখতে পারত এবং তাদের নিউজফিডে সেই পেইজের পোস্ট বেশি শো করতো।

২০১৬ঃ এই সময়ে এসে ইউজাররা যদি কোনো পোস্ট লাইক, কমেন্ট বা শেয়ারও না করতো শুধু একটি পোস্টে বেশি টাইম স্পেন্ড করতো তবে সেই পোস্টকেই প্রায়োরিটি বেশি দিত ফেসবুক এলগরিদম।

২০১৭ঃ এই বছর ফেসবুক নানা রিয়েকশন এড করে এবং ক্লাসিক লাইকের চেয়ে যে পোস্টে রিয়েকশন বেশি পড়ত যেমনঃ লাভ বা ওয়াও রিয়েক্ট সেই পোস্ট র‍্যাংকে টপে থাকতো।

২০১৮ঃ ক্লোজ ফ্রেন্ড, ফ্যামিলি মেম্বার বা প্রিয় গ্রুপ গুলোর পোস্ট অন্যান্য পোস্টের চেয়ে বেশি টপে থাকতো।

২০১৯ঃ সবচেয়ে হাই কোয়ালিটি ভিডিও এবং এটলিস্ট ১-৩ মিনিটের বেশি দেখা ভিডিও গুলো বেশি র‍্যাংকে থাকতো।

এবার আসুন ২০২৩ সালে এসে এলগোরিদম এর হাল জানা যাক। সবচেয়ে বড় যে কথা ফেসবুক ২০২৩ সালে এসে নিউজ ফিডকে শুধু ফিড হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। এই ফিডে যেসব পোস্ট বেশি ইনফরমেটিভ এবং মিনিংফুল সেটি বেশি শো করে। তাছাড়া ফেসবুক ৩ টি র‍্যাংকিং ফ্যাক্টর এই ২০২২ সালে এসে ফলো করেঃ

১.  পোস্টদাতাঃ আপনি যেসব ফ্রেন্ডের সাথে বেশি ইন্টারেক্টেড বা যেসব প্রতিষ্ঠানে যুক্ত আছেন সেসব পোস্ট আপনার কাছে আগে শো করবে।

২. কন্টেন্ট টাইপঃ আপনি যদি ভিডিও কন্টেন্ট দেখেন এবং বেশি এনগেজ হন তবে বেশিরভাগ ভিডিও কন্টেন্ট আপনার সামনে আসবে আবার ফটো তে বেশি এনগেজ হলে আপনাকে ফটো বেশি দেখাবে।

৩. এনগেজমেন্টঃ আপনার যেসব পোস্টে লাইক কমেন্ট বেশি পড়ে, এংগেজমেন্ট বেশি হয় সেসব পোস্ট আগে শো করে।

ফেসবুকের এলগরিদমকে বলা হয়ে থাকে এডজ রেঙ্ক। এই এলগরিদম মুলত তিনটা বিষয়ের উপর কাজ করে থাকে।

1. Engagement Behaviour

2. Type of post

3. Post age

Engagement Behaviour: এটা মুলত আপনার পোস্টে কি পরিমান এংগেইজমেন্ট হয়, কারা করে, কারা করে না। কত ভাগ করে এবং কত ভাগ করে না। যারা এংগেইজড হয় তারা কি করে? লাইক, শেয়ার, কমেন্ট? এই ডাটা গুলোর উপর ভিত্ত করেই আপনার পোস্ট কতজনের নিউজফিডে শো হবে তা নির্ভর করে থাকে।

Type of post: এটা মুলত আপনার পোস্টের ধরন। আপনি কি ধরনের কন্টেন্ট তৈরি করছেন অথবা শেয়ার করছেন? টেক্সট, ছবি, ভিডিও? ফেসবুক এক এক ধরনের পোস্টকে এক এক ভাবে ট্রিট করে। যেমন বর্তমান সময়ে ভিডিও এবং ছবি নিউজফিডে বেশি শো হয়ে থাকে। আবার মোবাইল থেকে ভিজিট করলে ভিডিও বেশি শো হয়।

Post age: এইটা মুলত আপনার পোস্টটি কতটুকু পুরানো তার উপর নির্ভর করে। ফেসবুক মুলত মোস্ট রিসেন্ট পোস্টগুলো নিউজ ফিডে বেশি দেখায়। তাই আপনার পোস্ট মুলত যত পুরানো হতে থাকবে, আপনার রিচ তত কমতে থাকবে। তবে নিয়মিত ভাবে এংগেইজমেন্ট পেলে রিচ বেড়ে যাবে।

উপরের সব গুলো পয়েন্ট কে আমরা যদি গুছয়ে লিখি তাহলে ব্যাপারটা দাঁড়ায় Facebook News Feed Algorithm তৈরি করা হয়েছে মূলত শুধু ফেসবুকের ইউসারদেরকে  ইন্টারেস্টিং এবং মিনিংফুল কন্টেন্ট দেখানোর জন্যে। আর এই একটা ইনফরমেশন  থেকে ই বুঝা যায় ফেসবুকের কাছে তার ইউসারের গুরুত্ব কত বেশি। কারণ দিন শেষে  এই ইউসারের আনাগোনাই ফেসবুককে টিকিয়ে রাখবে।  

আর এ কারণেই ফেসবুক আপনার পোস্ট করা কন্টেন্টকে আগে রেটিং করে তারপরে  ইউসারের প্রোফাইলে পাঠায়  

Facebook News Feed Algorithm  এ টোটাল ৪ টা স্টেপ আছে ঃ

1. inventory: এই স্টেপে ফেসবুক ওই সমস্ত কন্টেন্ট তার কাছ জমা করে যেগুলা  আপনার fnf, ফেসবুক এড বা যে কোন পেজ বা গ্রুপ পোস্টের মাধ্যমে আপনার ফিডে  আসতে পারে। 

2. Signals: এই স্টেপে এলগোরিদম ফেসবুকের কাছে সিগন্যাল পাঠায় ওই পোস্ট  গুলোর মধ্যে কি ধরনের পোস্টে আপনি ইন্টারেক্ট করেন, কোন কোন পোস্টারের সাথে  ইন্টারেক্ট করেন, কোন সময় ইন্টারেক্ট করেন ইত্যাদি। এই এলগোরিদম আপনার  বিহেভিয়ার এনালাইসিস করে বুঝার চেষ্টা করে কোন পোস্ট এবং কার পোস্ট কোন সময়  আপনার ফিডে এনে দিলে আপনি পছন্দ করবেন বা ভালো ফিল করবেন। 

3. Prediction: উপরের সিগন্যাল কে ফেসবুক ব্যাবহার করে প্রিডিকশনের কাজে।  এখানে এসে ফেসবুক সিদ্ধান্ত নেয় এক্সাক্ট কোন কন্টেন্ট টা আপনার ফিডে সে  পাঠাবে। ধরুন আপনি মেসির বিরাট ফ্যান। প্রিভিয়াসলি মেসির যত ছবি পাইছেন সব  গুলাতে আপনি রিএক্ট দিছেন। তাইলে ফেসবুকের কাছে সিগন্যাল পৌঁছে গেছে আপনি  মেসিকে পছন্দ করেন এবং ফেসবুক নিজে থেকে প্রিডিক্ট ও করে নিছে আপনার কাছে  তবে মেসির আরো বেশি পোস্ট বা কন্টেন্ট পৌঁছে দিতে হবে। 

4. Scoring: এই স্টেজে ফেসবুক আপনার ফিডে পাঠাতে পারে এমন সব কন্টেন্টকে  স্কোরিং করে। যেই কন্টেন্টের স্কোর যত বেশি সেই কন্টেন্ট ইউসারের টপ অফ  দ্যা ফিড এ শো করবে।

এখন, একটা ব্যাপার আপনার মাথায় রাখতে হবে, আপনার পোস্টে যত বেশি এংগেইজমেন্ট হবে, আপনার পেইজের ভ্যালু তত বাড়তে থাকবে। একই ভাবে, আপনার এংগেজমেন্ট যত কম হবে, আপনার পেইজের ভ্যালু তত কমতে থাকবে। ধরেন আপনার পেইজে ৫,০০০ ফলোয়ার আছে এবং কেউ আপনার কোন পোস্টে এংগেজ হয় না। তারমানে এডজ রেঙ্ক এলগরিদম অনুসারে আপনার পেইজের নেগেটিভ মার্কিং হবে। আপনার নতুন পোস্টগুলোর রিচ তত কমতে থাকবে। তাই আপনার কত জন ফ্যান আছে তার চাইতে আপনার কত পার্সেন্ট ফ্যান এংগেজ হয় এটা গুরুত্বপুর্ন। যত বেশি ফ্যান এংগেজ হবে, আপনার পেইজের ভ্যালু তত বাড়বে।

তাছাড়া Hide this post or Hide Ad বা ফেভারিট অপশনের মাধ্যমে আপনি কি ধরনের কন্টেন্ট বেশি দেখতে চান বা কম দেখতে চান তা কন্ট্রোল করতে পারবেন।

সো, ফেসবুক এলগরিদম নিয়ে তো জেনে গেলেন। এবার এলগরিদম নিয়ে বাজিমাত করার পালা। জাস্ট ডু ইট!!!

যদি হাতে কলমে কাজ শিখে নিজেকে মার্কেটে স্টাবলিশ করতে চান তবে এখনি এনরোল করে ফেলুন আমার প্রিমিয়াম কোর্স:

​​​​​”Digital Marketing RoadMap” এ…

Share:

"ইফেক্টিভ ফানেল স্ট্রেটিজি" ফ্রি ইবুকটি ডাউনলোড করতে নিচের ফর্মটি ফিলাপ করুন

আরো ব্লগ

লিড জেনারেশন করলে অডিয়েন্স থাকবে হাতের মুঠোয়!!

আমরা যারা অনলাইনে বিজনেস করি আমাদের সব থেকে বড় সমস্যা হচ্ছে আমরা ম্যাসেঞ্জারে ক্লায়েন্টের সাথে ডিল ক্লোজ করতে পারি না। আমরা ম্যাসেজ তো পাই হাজারে

ভিসিবিলিটি ইজ মোর ইম্পরটেন্ট দ্যান এভেইলেবেলিটি

চা খেতে বের হয়েছিলাম। প্রথম চুমুক টা দিতেই অপর পাশের মুদি দোকানে চোখ গেলো। একজন লোক শার্ট প্যান্ট ইন করে তেলের বোতল গোছাচ্ছে। মোটামুটি ১৫/২০

আই লেভেল ইজ বায় লেভেল!

ইংরেজীতে একটা প্রবাদ আছে, Where there is will, There is a way. আর তাই কাস্টমারের সোস্যাল বিহেভিয়ার বা পারচেজ বিহেভিয়ারে প্রভাব ফেলতে দিনের পর দিন

যেভাবে লিংকডিন প্রোফাইল গুছালে ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরে যাবে!

আপনি হয়তো ভাবছেন লিংকডিন প্রোফাইল গুছিয়ে কি হবে কিংবা লিংকডিন প্রোফাইল এতদিন তো প্রয়োজন পড়েনি এখনই বা কেন প্রয়োজন হবে অথবা কে দেখে এই লিংকডিন