মার্কেটিংয়েও গেরিলা যুদ্ধ..

আজ আপনাদের একটি চুরির গল্প শোনাবো। রোমানিয়া এমন একটি দেশ যেখানে প্রতি দুই মিনিটে একটি করে মোবাইল চুরি হয়ে যায়। আর তাই রোমানিয়ার মোবাইল ফোন কোম্পানী গুলো মোবাইলের উপর তার গ্রাহকদের ইন্সুরেন্স সেবা ও দিয়ে থাকে। তবে রোমানিয়ার খুব কম মানুষই এই ইন্সুরেন্স সেবা নিতে আগ্রহ প্রকাশ করে। আর তাই ভোডাফোন নামের একটা ফোন কোম্পানী রোমানিয়ান মানু্ষদের মনে ফোন ইন্সুরেন্স সম্পর্কে এওয়্যারনেস ক্রিয়েট করার জন্য একটা মার্কেটিং প্ল্যান করে। তারা কিছু প্রফেশনাল পিক পকেটারকে হায়ার করে তবে মোবাইল চুরি করার জন্য না বরং রোমানিয়ার রাস্তা ঘাটে হেঁটে বেড়ানো মানুষদের পকেটে বা ব্যাগে একটা প্রমোশনাল ফ্লায়ার ঢুকিয়ে দেয়ার জন্যে। সেই ফ্লায়ার এ লিখা থাকতো, আপনার মোবাইল ফোনটি চুরি করা একদমই সহজ তাই অনুগ্রহ করে আপনার ফোনটি ভোডাফোন সেন্টার এ নিয়ে গিয়ে ইন্সুরেন্স করুন। এতে জনমনে এওয়্যারনেস তৈরি হয় যে, আজকে তো সত্যিই আমার ফোনটি চুরি হতে পারতো। এই যে চুরির গল্প শুনালাম, মার্কেটিং এর ভাষায় এই এপ্রোচটাটা কে বলে আনকনভেনশনাল মার্কেটিং। যদি আরো একটু প্রিসাইস করে বলি তবে এক বলে গেরিলা মার্কেটিং।

গুগল মামার কাছে গেরিলা কি জানতে চাইলে মামা বলে একটা ছোট দল নিয়ে একটি বড় সেনাবাহিনীকে পিছন থেকে আক্রমণ করাকেই বলে গেরিলা যুদ্ধ আর যে বা যারা এহেন কর্ম সাধন করে তাদের বলে গেরিলা বাহিনী বা গেরিলা যোদ্ধা। এবার বলুন, গেরিলা মার্কেটিং কি এটা বুঝতে এখনো কোন সমস্যা আছে? থাকার কথানা, তারপর ও চলুন শুনি। গেরিলা মার্কেটিং মানে হলো নিজেদের প্রোডাক্টের প্রমোশান বা প্রোডাক্টের প্রমোশনাল আক্রমন এমন ভাবে করা যেনো ওই চমকে যাওয়া সেনাবাহিনী এর মতন আপনার কাস্টমার ও যেনো চমকে উঠে। তাহলে বুঝতেই পারছেন যুদ্ধের ময়দান থেকেই কিন্তু উঠে এসেছে এই গেরিলা মার্কেটিং নামটা।

হাতে কলমে ডিজিটাল মার্কেটিং প্র‍্যাক্টিস করতে চান?

গেরিলা মার্কেটিং এর জনক হচ্ছেন “লিও বার্নেট” এজেন্সির ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর “জে কনরাড লেভিন্সন”। মূলত ১৯৮৪ সালে ” গেরিলা এডভারটাইজিং” নামের একটি বই প্রকাশের মাধ্যমে মার্কেটিং এর এই গেরিলা পদ্ধতিটাকে তিনি সামনে নিয়ে আসেন।

গেরিলা মাকের্টিংয়ে মূলত সাইকোলজি, ও আবেগের ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই পদ্ধতিতে সরাসরি ক্রেতাকে কেনার কথা না বললেও কৌশলে তাকে আকৃষ্ট করা হয়ে থাকে যা একজন সাধারণ ক্রেতা সহজে বুঝতে পারে না। গেরিলা মার্কেটিং এর মূল লক্ষ্য গ্রাহকের মনে দীর্ঘ দিন প্রভাব বিস্তার করা এবং আগ্রহ তৈরি করা যেখানে ট্রেডিশনাল মার্কেটিং হলো কাস্টমার কে জানানো ও পণ্য ক্রয়ের জন্য আহবান করা। 

আপনাকে এটা মাথায় রাখতে হবে যে, আজকাল মানুষ ট্রেডিশনাল মাধ্যমগুলো যেমন- টিভি, নিউজপেপার, বিলবোর্ড, ওয়েবসাইট এর আনাচেকানাচে বিজ্ঞাপন দেখতে দেখতে বিরক্তই বলা চলে। তাই মানুষ সব কিছুর মতোই বিজ্ঞাপনে ও নতুন কিছু চায়। আর তাই মার্কেটারদের কে ও নতুন করে আউট অফ দ্যা বক্স এ ভাবতে হচ্ছে, আরো নতুন কি করা যেতে পারে যেটা দেখে মানুষ সন্তুষ্ট ও হবে আবার আমার ব্র‍্যান্ড বা প্রোডাক্টকে দীর্ঘদিন মনে ও রাখবে। এটা ও মনে রাখতে হবে যে গেরিলা মার্কেটিং এ টাকা কম বুদ্ধির প্রয়োগ চাই বেশি। আর সাথে যদি একটু রসিকতার সাথে কপিরাইটিংটা নিয়ে চতুরতা করা যায় তাইলে তো কথাই নাই।

লিখতে লিখতে একটা দারুণ গেরিলা মার্কেটিং এর গল্প মনে পরে গেলো। কোন এক সময় স্বপ্ন প্রথম আলোর শেষ পেজের অর্ধেকটা জুড়ে বিজ্ঞাপন হিসেবে শুক্রবারের বাজারের একটা লিস্ট দিতো এবং এটা ও মেনশন করে দিতো যে শুক্রবারে কেও যদি ১০০০ টাকার বাজার করে স্বপ্ন থেকে তবে প্রথম আলোর এক কপি পত্রিকা তারা ফ্রিতেই দিবে। কিছুদিন পর হঠাত করে আগোরা স্বপ্নের সেই অর্ধেক পেজ বিজ্ঞাপনের ঠিক উপরেই এক ইঞ্চ জায়গা নিয়ে লিখে দিলো “everything 1 taka less than any other supershop“.

ব্যাস কেল্লাফতে, স্বপ্ন এতো টাকা খরচ করে ও মানুষের মুখে উদাহরণ হতে পারলোনা, কিন্তু আগোরা এক ইঞ্চির টাকা খরচ করে নিজেদের উদাহরণ ক্রিয়েট করে ফেললো। এটাই মূলত গেরিলা মার্কেটিং। সবার থেকে ভিন্ন, কিন্তু সবার নজরে।

গেরিলা মার্কেটিং নিয়ে খেলার আগে একটা সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরন রয়েছে, গেরিলা মার্কেটিং যেহেতু লো কস্ট মার্কেটিং এবং এখানে কিছুটা অফ-দ্যা-ওয়াল ট্যাক্টিক্স ব্যবহার করা হয় তাই বড় ব্র‍্যান্ড গুলোকে এই যুদ্ধে নামতে হলে খুব সাবধানে, পরে না আবার নিজের ইমেজ হারিয়ে বসে। বড়দের কথা যেহেতু চলেই এসেছে, তাইলে একটা উদাহরণ না টানলেই নয়। ২০০৯ সালে কোকাকোলা একটা গ্লোবাল মার্কেটিং ক্যাম্পেইন করে। এই ক্যাম্পেইন এর হাত ধরে কোকাকোলা পৃথিবীর অনেক গুলো দেশে বিভিন্ন স্কুলে বা শপিং মলে একটা করে ভেন্ডিং মেশিন বসায় এবং সেই মেশিনে কয়েন ফেললে একজন মানুষ তার নিজের হাত দিয়ে মেশিনের ভেতর থেকে কোক বের করে দেয়। তাও আবার একটা না, একজনকে একাধিক টা। কখনো কোকের সাথে দেয় পিৎজা কখনো আবার বার্গার। কোকাকোলার এই গেরিলা মার্কেটিং ক্যাম্পেইনটা সেই সময় ব্র‍্যান্ড পাড়ায় খুব হই হুল্লোড় ফেলে দিয়েছিলো। এই আইডিয়াটা এসেছিলো তখনকার কোকাকোলার সিনিয়র ব্র‍্যান্ড ম্যানেজার A J Brustain এর কাছ থেকে। এবং মজার কথা হলো এই এড ক্যাম্পেইনটা CLIO’s গোল্ড ইন্টারেক্টিভ এওয়ার্ড পায়।

একবার স্ন্যাপচ্যাট একটা দারুণ ক্যাম্পেইন লঞ্চ করেছিলো। তারা করেছিলো কি একটা হলুদ বিলবোর্ড এর গায়ে তাদের লোগোটা সেটে দিয়ে চুপচাপ বসে বসে মজা দেখছিলো। মজাটা কি জানেন? মানুষ ওই বিলবোর্ডের সামনে দিয়ে আসে যায় আর ভূতের মতন দেখতে স্ন্যাপচ্যাট এর লোগোটা দেখে আর ভাবে এটা আবার কি? এ আবার কোন ভূত নামলো শহরে? ব্যাস রাতারাতি এই বিলবোর্ড টক অব দ্যা টাউন হয়ে যায়।

আরেকবার Felix Baumgartner নামের এক অস্ট্রেলিয়ান স্কাইডাইভার ২০১২ সালে স্পেস থেকে জাম্প দেয়ার একটা আত্মঘাতি প্ল্যান করে বসে। জাম্প দিতে গিয়ে সে যখন তার ইভেন্টের জন্য স্পন্সর খুঁজছিলো তখন রেড বুল ফেলিক্সকে ৩০ মিলিয়ন ডলার স্পন্সর করে বসে। ফেলিক্স যখন মাটি থেকে ২৪০০০ ফুট উপরে গিয়ে হিলিয়াম বেলুন থেকে লাফ দেয় তখন তার গায়ে যে স্পেস স্যুট পরে ছিলো সেটার পুরো গায়ে ছিলো রেড বুল এর লোগো। আর রেড বুল এর এই মার্কেটিংটাকেই এখন পর্যন্ত বেস্ট মার্কেটিং স্টান্টস অফ অল টাইম বলা হয়ে থাকে। রেড বুল হলো এমন একটা কোম্পানি যাদের ব্র‍্যান্ড স্লোগান ই হলো “রেড বুল গিভস ইউ উইংস“. আর তাইতো ফেলিক্স এর স্পেস থেকে জাম্প দেওয়া এবং সেটাকে রেড বুল স্পন্সর করা তৈরি করেছে একটা হিস্টোরি।

Jay Conrad Levinson বলেছিলেন, গেরিলা মার্কেটিং মুলত বড় কোন বাজেটের উপর নির্ভর করে পরিচালনা করা হয় না, বরং এটা করতে নির্ভর করা হয় মার্কেটারদের ইমাজিনেশন পাওয়ার এর উপরে।

Share:

"ইফেক্টিভ ফানেল স্ট্রেটিজি" ফ্রি ইবুকটি ডাউনলোড করতে নিচের ফর্মটি ফিলাপ করুন

আরো ব্লগ

লিড জেনারেশন করলে অডিয়েন্স থাকবে হাতের মুঠোয়!!

আমরা যারা অনলাইনে বিজনেস করি আমাদের সব থেকে বড় সমস্যা হচ্ছে আমরা ম্যাসেঞ্জারে ক্লায়েন্টের সাথে ডিল ক্লোজ করতে পারি না। আমরা ম্যাসেজ তো পাই হাজারে

ভিসিবিলিটি ইজ মোর ইম্পরটেন্ট দ্যান এভেইলেবেলিটি

চা খেতে বের হয়েছিলাম। প্রথম চুমুক টা দিতেই অপর পাশের মুদি দোকানে চোখ গেলো। একজন লোক শার্ট প্যান্ট ইন করে তেলের বোতল গোছাচ্ছে। মোটামুটি ১৫/২০

লগরিদম ভাল না লাগলেও আপনাকে এলগরিদম জানাই লাগবে!!

আমরা যারা ফেসবুকের এডভারটাইজমেন্ট নিয়ে কাজ করি আমাদের সব থেকে বড় প্রব্লেমটা কি জানেন?  প্রব্লেমটা হলো আমরা লাখ লাখ টাকার এড  ফেসবুকে ঠিকই চালাই কিন্তু

আই লেভেল ইজ বায় লেভেল!

ইংরেজীতে একটা প্রবাদ আছে, Where there is will, There is a way. আর তাই কাস্টমারের সোস্যাল বিহেভিয়ার বা পারচেজ বিহেভিয়ারে প্রভাব ফেলতে দিনের পর দিন

OFFER TIME ENDS IN:

Days
Hours
Minutes
Seconds

*Last date: November 29, 2024. Don't Miss This Offer