কমপ্লেইন ইজ দ্যা গিফট

একদিন একটা পুরনো সিম তুলবো বলে বাংলালিংক অফিসে গিয়েছিলাম। গেট দিয়ে ঢুকতেই গার্ড আমাকে এত বড় একটা সালাম দিলেন, যেন আমি একজন মেজর জেনারেল আর সে আমার সৈনিক। যে কেউ হলে হয়তো খুশি হয়েই যেতেন, কিন্তু আমি ইতস্তত বোধ করতে শুরু করলাম। কারণ এত বড় স্যালুটের যোগ্য আমি না। আমার কাছে মনে হলো, আমার সাথে একটা মশকরা করা হয়েছে। একইভাবে আবারো বের হতে যাবো আবারো বিশাল একটা সালাম। 

কি মুস্কিল!

একই রকম ফিলিংস টা আসে যখন ব্যাংক বা বিকাশের (Bkash) কাস্টমার কেয়ারে ফোন করি। ফোনটা ধরেই তারা এতো সুন্দর করে কথা বলে, ইচ্ছা করে, মাটিটা দুই ভাগ হয়ে যা আমি একটু পালিয়ে বাঁচি। এসব জায়গায় ফোন করলেই মনে পড়ে যায় যে, চালাক লোকেদের মাঝে আমি ই মনে হয় একমাত্র বোকা।

আপনার সাথে এমন হয়েছে কখনো? আপনি একটা ক্লথিং শোরুমে গেলেন। ঘুরে ঘুরে দেখছেন আর কি কেনা যায় ভাবছেন। মাঝে মাঝে উল্টে-পাল্টে প্রাইস ট্যাগটাও দেখার চেষ্টা করছেন। হঠাৎ খেয়াল করলেন, পিছন থেকে কে যেন আপনার সাথে ছায়া হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যেদিকেই ঘুরছেন সেই ছায়াটাও পিছে পিছে সেদিকে ঘুরছে। ব্যাস আর কি? একটু প্রাইস গুলো ভাল করে দেখে বাজেট ফ্রেন্ডলি একটা কাপড় যে কিনব দিল সেটা রফাদফা করে।

একজন গ্রাহক হিসেবে আমি এই ব্যাপারগুলো ফিল করতে পেরেছি, কিন্তু একজন বিক্রেতা হিসেবে তারা কি আদৌ এটা বোঝেন? বোঝেন না। কারণ আমার কাছে যা 6 তার কাছে তা 9. তার পাশ থেকে তিনি ঠিক, আমার পাশ থেকে আমি। 

হাতে কলমে ডিজিটাল মার্কেটিং প্র‍্যাক্টিস করতে চান?

উপরের কথাগুলো পড়ার পর আপনার মাথায় কী কাজ করছে? আমার মাথায় দুইটা জিনিস কাজ করছে —

১) কাস্টমার ইজ দ্যা কিং (Customer is the king) এবং

২) কমপ্লেইন ইজ দ্যা গিফট (Complain is the gift)

ব্যাপারটা আরেকটা উদাহরণের মাধ্যমে বোঝা যাক।

একদিন ফুডপান্ডা’য় একটা বার্গার অর্ডার করি। অর্ডারটা দিয়েই অধীর অপেক্ষায় বসে আছি— বার্গার কখন আসবে, কখন আসবে। কেননা বার্গারের লোভনীয় ছবিটাই আমার জিভে জল এনে দিচ্ছিল। অথচ শেষমেশ আমি বার্গারটার ২০%-ও খেয়েছি কিনা, সন্দেহ আছে। উল্টো ফুড পান্ডায় কমপ্লেইন করে বসি। নেগেটিভ রিভিউ দেই, এবং কাছের মানুষদের এই রেস্তোরাঁ থেকে দূরেই থাকতে বলি। 

প্রকৃতিগতভাবেই এখানে একজন কাস্টমারের দুইটা অনুভূতি প্রকাশ পেয়েছে:

১) ট্রাস্ট (trust)

২) রিলায়াবিলিটি (reliability)

আর এই দুই অনুভুতির উপস্থিতিতে সবচেয়ে অপছন্দের ব্র্যান্ড যেমন সবচেয়ে পছন্দের ব্র্যান্ডে রূপ নিতে পারে, ঠিক তেমনি সবচেয়ে পছন্দের ব্র্যান্ডও সবচেয়ে অপছন্দের ব্র্যান্ডে রূপ নিতে পারে। 

এর মানে হলো: Customer is always king. 

আপনি যদি ঠিকঠাকভাবে আপনার অভিযোগগুলোর যত্ন নিতে পারেন এবং এই ট্রাস্ট এবং রিলায়াবিলিটি বজায় রাখতে পারেন, তবে আপনি কাস্টমারের টপ অফ দ্য মাইন্ডে (top of the mind) পৌঁছে যাবেন। আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি যে, কোকাকোলার মতন এত বড় কোম্পানী কেন এখনো টেলিভিশনে বা ডিজিটাল মাধ্যমে এড দেখায়? তারা যদি টানা এক বছর কোন বিজ্ঞাপন প্রচার না করে, তবু সবাই চোখ বন্ধ করে কোকাকোলা-ই খাবে, তাই না?

আসলেই কি তাই?

একটা বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন যে, যে যতই ভালো হোক না কেন, পৃথিবীতে সবকিছুই রিপ্লেসেবল। আর নিজের এই রিপ্লেসমেন্ট কে ঠেকিয়ে রাখার জন্য প্রতিটা ব্র‍্যান্ডকেই ব্র‍্যান্ড এওয়ারনেস এবং ব্র‍্যান্ড রিকোগনিশান (recognition)-এ নজর দিতে হয়। প্রতিদিন বারবার করে নিজের চেহারাটা কাস্টমারদের স্মরণ করিয়ে দিতে হয়, যেন কাস্টমার তাকে ভুলে না যায়।

প্রতিদিন বারবার করে বিজ্ঞাপন প্রচার করার কারণে অনেক টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু তার ফলে আমাদের মনে সেই ব্র‍্যান্ড-এর জন্য জায়গা তৈরি হচ্ছে। আর একেই বলে ‘টপ অফ দ্যা মাইন্ড’।

২ সেকেন্ডের মধ্যে একটা আইস্ক্রিম কোম্পানীর নাম বলুন তো? কেউ বলেছেন ‘কোয়ালিটি’, কেউ আবার ‘ইগলু’। এর মানে হলো, এই দুইটা আইস্ক্রিম কোম্পানীর নাম আপনার টপ অফ দ্যা মাইন্ড-এ রয়েছে।

কাজেই নিজের ব্র‍্যান্ড হোক বা নিজেকেই হোক, মানুষের টপ অফ দ্যা মাইন্ড এ নিয়ে যেতে হলে যেটাই করবেন, প্রতিদিন করুন, এবং নির্দিষ্ট সময়েই করুন, বারবার করুন। 

এখন এখানে একটা প্রশ্ন চলেই আসে, তার মানে কি প্রোডাক্ট বিক্রির জন্য রোজ সাউন্ড করে যেতে হবে? না, মোটেও তা না। কাস্টমারের টপ অফ দ্যা মাইন্ডে যেতে হলে বিজ্ঞাপনের KPI সেলস না রেখে রাখতে হবে ব্র‍্যান্ড এওয়ারনেস। আবার KPI যখন ব্র‍্যান্ড এওয়ারনেস হবে, তখন বিজ্ঞাপনে থাকতে হবে মানুষের মন ভালো করে দেওয়ার ঔষধ। সেই বিজ্ঞাপনে আবার কখনো কখনো  প্রোডাক্ট নাও থাকতে পারে। যেমন, একবার গ্রামীন ফোনের একটা বিজ্ঞাপন দেখেছি, যেখানে দেশের তরুণদের উদ্দেশ্য করে মেসেজ দেওয়া হয়েছে, “অনলাইন দুনিয়ায় আপনাকে জানতে হবে, কোথায় আপনাকে থামতে হবে”। নিঃসন্দেহে বলা যায়, গ্রামীনফোনের এই এড ক্যাম্পেইনটার KPI-ই ছিলো আপনার আর আমার মন ভালো করে দেওয়া। কারণ, নতুন কাস্টমার অর্জন করা গুরুত্বপূর্ণ, তবে প্রফিট বৃদ্ধি করতে পুরাতন কাস্টমার ধরে রাখা আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। 

তাই কাস্টমারের অভিযোগকে উপহার মনে করুন, কাস্টমারের সন্তুষ্টি ট্র‍্যাক করুন এবং কাস্টমারের মনের ভিতর নিজের জন্য টপ অফ দ্য মাইন্ড তৈরি করুন।

A complaint is a gift: your most unhappy customers are your greatest source of learning.

যদি হাতে কলমে কাজ শিখে নিজেকে মার্কেটে স্টাবলিশ করতে চান তবে এখনি এনরোল করে ফেলুন আমার প্রিমিয়াম কোর্স:

​​​​​”Digital Marketing RoadMap” এ…

Share:

"ইফেক্টিভ ফানেল স্ট্রেটিজি" ফ্রি ইবুকটি ডাউনলোড করতে নিচের ফর্মটি ফিলাপ করুন

আরো ব্লগ

লিড জেনারেশন করলে অডিয়েন্স থাকবে হাতের মুঠোয়!!

আমরা যারা অনলাইনে বিজনেস করি আমাদের সব থেকে বড় সমস্যা হচ্ছে আমরা ম্যাসেঞ্জারে ক্লায়েন্টের সাথে ডিল ক্লোজ করতে পারি না। আমরা ম্যাসেজ তো পাই হাজারে

ভিসিবিলিটি ইজ মোর ইম্পরটেন্ট দ্যান এভেইলেবেলিটি

চা খেতে বের হয়েছিলাম। প্রথম চুমুক টা দিতেই অপর পাশের মুদি দোকানে চোখ গেলো। একজন লোক শার্ট প্যান্ট ইন করে তেলের বোতল গোছাচ্ছে। মোটামুটি ১৫/২০

লগরিদম ভাল না লাগলেও আপনাকে এলগরিদম জানাই লাগবে!!

আমরা যারা ফেসবুকের এডভারটাইজমেন্ট নিয়ে কাজ করি আমাদের সব থেকে বড় প্রব্লেমটা কি জানেন?  প্রব্লেমটা হলো আমরা লাখ লাখ টাকার এড  ফেসবুকে ঠিকই চালাই কিন্তু

আই লেভেল ইজ বায় লেভেল!

ইংরেজীতে একটা প্রবাদ আছে, Where there is will, There is a way. আর তাই কাস্টমারের সোস্যাল বিহেভিয়ার বা পারচেজ বিহেভিয়ারে প্রভাব ফেলতে দিনের পর দিন